বাংলাদেশ এই প্রথম কলা গাছের আঁশ থেকে ব্যবহার উপযোগী পরিবেশ বান্ধব , নতুন শাড়ির উদ্ভাবন!
কলার ডালপালা, সাধারণত বর্জ্য হিসাবে বিবেচিত হয়, সম্ভবত বাংলাদেশে কলা-ফাইবার টেক্সটাইলের জন্য ব্যবহৃত হতে চলেছে কারণ কলা-ফাইবার থেকে সবুজ শাড়ি উদ্ভাবিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জেলা বান্দরবানে।বান্দরবানে কলাগাছের তন্তু থেকে সুন্দর শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের দাবি, দেশে কলা-আঁশ থেকে সুতা ও শাড়ি তৈরির ঘটনা এটিই প্রথম।শনিবার (১ এপ্রিল) বাংলাদেশ পোস্টকে বান্দরবানের নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অবশেষে ৩১ মার্চ (শুক্রবার) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াসমিন পারভিন তিবরিজির সরাসরি তত্ত্বাবধানে শাড়িটি তৈরি করা হয়।বান্দরবান জেলা প্রশাসন দাবি করেছে, কলা-ফাইবার শাড়িটি পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এটি জৈব এবং বায়োডিগ্রেডেবল।শনিবার বাংলাদেশ পোস্টের সাথে আলাপকালে বান্দরবানের ডিসি ইয়াসমিন পারভিন তিবরিজি বলেন, “আমি আপনাকে জানাতে পেরে খুবই আনন্দিত ও সন্তুষ্ট যে শাড়িটি কলার ফাইবার থেকে সফলভাবে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের আর কোথাও কলাগাছের সুতা দিয়ে কেউ শাড়ি বানিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তা না হলে এটাই হবে কলার সুতা দিয়ে তৈরি প্রথম শাড়ি।”এটিকে পরিবেশবান্ধব টেক্সটাইল দাবি করে তিনি বলেন, কলা-ফাইবার শাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।ফল তোলার পর কলাগাছ কেটে ফেলা হয়। এর মধ্য দিয়ে পার্বত্য জেলায় প্রচুর পরিমাণে জন্মানো কলাগাছ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারেরও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অনেক দরিদ্র পরিবারও স্বাবলম্বী হবে, তিনি যোগ করেন।এই শাড়ির প্রধান কারিগর হলেন মৌলভীবাজার জেলার মণিপুরী সম্প্রদায়ের সদস্য রাধাবতী দেবী। তিনি বান্দরবান জেলায় এসে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের ডাকে সাড়া দিয়ে এই শাড়ি বুনেছেন।মৌলভীবাজারে তার এলাকায় যারা মণিপুরি শাড়ি বুনেন তারা রাধাবতীকে এই দায়িত্ব না নিতে বলেছেন। কারণ তারা ভয় পেয়েছিলেন যে তিনি ব্যর্থ হবেন এবং তিনি ডিসিকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে মণিপুরি তাঁতিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইয়াসমিন পারভিন তিবরিজি বলেন, “রাধাবতী দেবী পরবর্তীতে আমাদের অনুপ্রেরণা নিয়ে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং তিনি সফল হন।কলা-ফাইবার শাড়ির পরিবেশবান্ধব বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, কলার আঁশ দিয়ে শাড়ি তৈরি হলে তা পরিবেশবান্ধব হতে পারে। . তবে এর জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা প্রয়োজন।আগে সবুজ ব্যাগ বা ‘সোনালী ব্যাগ’ পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো, যা পরিবেশবান্ধব। কারণ এই ধরনের পণ্য পচনশীল। কলার ফাইবারও বায়োডিগ্রেডেবল। তবে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার পর চূড়ান্ত বক্তব্য দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।বান্দরবান ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য এলাকায় কলার ডালপালা প্রচুর। ডালপালা থেকে ম্যানুয়ালি ফাইবার নিষ্কাশন শ্রম নিবিড় এবং সময়সাপেক্ষ। কলাগাছের ডালপালা সাধারণত নষ্ট হয় এবং কৃষি ডাম্প হিসাবে ফেলে দেওয়া হয়। গাছের ডালপালা শাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হলে তা পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রবিবার ২রা এপ্রিল ২০২৩, দুপুর ০২:২৩