• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫
  • - ৩৩° সে:
Language

ব্যাংক ও বীমা

ন্যাশনাল ব্যাংক এবার পরিচালক পদ হারালেন হোসাফ পরিবারের দুই সদস্য

বুনন নিউজ

বুধবার, ৩১শে আগস্ট ২০২২

No Caption

গতকাল অনলাইনে অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির এজিএমে পরিচালক পদ থেকে এ দুজনকে বাদ দেওয়া হয়।

প্রতিষ্ঠার সময় বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের (এনবিএল) মালিকানায় ছিল দেশের কয়েকটি পরিবার। এরপর বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এতে একপর্যায়ে ব্যাংকটির নেতৃত্ব চলে যায় সিকদার পরিবারের হাতে।

এবার ব্যাংকটির পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন ও পরিচালক মাবরুর হোসেনকে। এর মাধ্যমে ব্যাংকটিতে সিকদার পরিবারের কর্তৃত্ব আরও শক্তিশালী হলো। এই পরিবারের বাইরে পরিচালক হিসেবে এখনো ব্যাংকটিতে রয়েছেন কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ও আরমানা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া তাহের। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার 
পর থেকে ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন।

গতকাল ন্যাশনাল ব্যাংকের ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) পর্ষদ থেকে দুজন পরিচালককে বাদ দেওয়া হয়। সভা শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে ব্যাংকের শেয়ারধারীদের অনলাইনে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এতে অংশ নেন ৭৫৪ জন শেয়ারধারী।

অনলাইন ভোটে ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়ে আবার পরিচালক নির্বাচিত হন রন হক সিকদার। আর মোয়াজ্জেম হোসেন ও পরিচালক মাবরুর হোসেনকে শেয়ারধারীরা প্রত্যাখ্যান করেন বলে জানান ন্যাশনাল ব্যাংকের কোম্পানি সচিব কায়সার রশিদ। এজিএমে তিনি আরও জানান, ব্যাংকটি ২০২১ সালের জন্য কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। আর এতে ৯৫ শতাংশ শেয়ারধারী সমর্থন দিয়েছেন।

ফলে প্রশ্ন উঠছে অনলাইন ভোটের ব্যবস্থাপনা নিয়ে। কারণ, ৯৫ শতাংশ শেয়ারধারী কখনোই লভ্যাংশ না দেওয়াকে সমর্থন দেবে না। ব্যাংকটির একাধিক সূত্র বলছে, শেয়ারধারীদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) আইডি ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে অনলাইনে ভোট দেওয়া হয়। আর এতেই হোসাফ পরিবারের দুই সদস্যও পরিচালক থেকে বাদ পড়েন।

এ নিয়ে জানতে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেহমুদ হোসেনকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

গতকাল অনলাইনে ব্যাংকটির ৩৯তম এজিএম অনুষ্ঠিত হয়। এতে ধানমন্ডির বাসা থেকে যুক্ত হন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার, পরিচালক পারভীন হক সিকদার, রন হক সিকদার, স্বতন্ত্র পরিচালক মুরশিদ কুলী খান, এমডি মেহমুদ হোসেন, কোম্পানি সচিব কায়সার রশিদ ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা কৃষ্ণ কমল ঘোষ। অনলাইনে যোগ দেন পরিচালক খলিলুল রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন, মাবরুর হোসেন, স্বতন্ত্র পরিচালক নাইমুজ্জামান ভূঁইয়া ও শফিকুর রহমান।

সভা পরিচালনা করেন কোম্পানি সচিব। তিনি বিভিন্ন অ্যাজেন্ডা উপস্থাপন করেন ও শেয়ারধারীদের মতামত তুলে ধরে সিদ্ধান্ত জানান। এ ছাড়া বক্তব্য দেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এমডি। ৩০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায় এজিএমের কার্যক্রম। কয়েকজন পরিচালক ও শেয়ারধারী সভায় বক্তব্য দিতে চাইলেও তাঁদের সুযোগ দেওয়া হয়নি।

এজিএমে ব্যাংকটির এমডি বলেন, একজন গ্রাহকের মৃত্যুতে তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণখেলাপি হয়েছে। এতে আয় কমে গেছে। এ জন্য 
সব সূচকের অবনতি হয়েছে। ভবিষ্যতে এসএমই ঋণের মাধ্যমে ব্যাংকটির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন ব্যাংকটির অনিয়ম–দুর্নীতিতে বাধা দিতেন। পর্ষদে আলোচনা তুলতেন। এ কারণে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকই পারে আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে।

এ নিয়ে জানতে মোয়াজ্জেম হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

দুর্বল ব্যাংকের তালিকায় এনবিএল

এদিকে এনবিএলকে দুর্বল ব্যাংকের তালিকায় যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংকটির অনিয়ম সামাল দিতে বিশেষ উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। অনিয়মের কারণে কয়েক ধরনের ঋণ বাদে ব্যাংকটির বেশির ভাগ ঋণ কার্যক্রমই বন্ধ রয়েছে।

ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে এরই মধ্যে পরিচালকদের সঙ্গে দুই দিন আলোচনায় বসেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এসব সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে, পরিচালকেরা এনবিএলের কার্যক্রমে অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে প্রয়োজনে এর পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে। নিয়োগ করা হবে প্রশাসক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনেই ব্যাংক পরিচালনা করতে হবে।

ইতিমধ্যে ব্যাংকটির যে খারাপ অবস্থা হয়েছে, তা সামাল দিতে তিন বছর মেয়াদি একটি সমঝোতা চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংকটির কাছে চুক্তিপত্র পাঠানো হয়েছে, এতে সব পরিচালককে সই করতে বলা হয়েছে।

এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ব্যাংকটি নিয়মিত তদারক করবেন। ২০১৪ সাল থেকে ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক দেশের প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক। দেশব্যাপী ২১৯টি শাখা রয়েছে ব্যাংকটির। ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ ৪০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ২৩ শতাংশই খেলাপি।