বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
‘নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি’ নামে নতুন আরেকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
গত ১২ জুলাই গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদারের যোগদানের পর তাঁর সভাপতিত্বে গতকাল দ্বিতীয় পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্ষদ সভাতেই নতুন আরেকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নগদ ফাইন্যান্স নামে নতুন এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হলেও এটির সঙ্গে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) নগদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের করা বাংলাদেশ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বিধিমালা অনুযায়ী, এমএফএস সেবা দিতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিকানার সিংহভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকতে হবে। এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান এমএফএস হিসেবে নিবন্ধন পাবে না। বর্তমানে দেশে যে কটি এমএফএস প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার মধ্যে বিকাশ ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী, উপায় ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের সহযোগী হিসেবে ট্যাপ পরিচালিত হচ্ছে। আর নগদ ডাক বিভাগের সেবা হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নগদ এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন পায়নি। তাই এ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের অংশীদার হতেই নগদ ফাইন্যান্সের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শর্ত সাপেক্ষে নগদ ফাইন্যান্সকে আগ্রহপত্র দেওয়ার বিষয়ে পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গতকালের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নগদ ফাইন্যান্সকে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বা আগ্রহপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আগ্রহপত্র দেওয়ার মানে হলো কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের প্রাথমিক ধাপ। নগদ ফাইন্যান্স প্রাথমিক ধাপ পেরোল। এখন পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করলেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন পাবে প্রতিষ্ঠানটি।
এমন এক সময়ে নতুন এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যখন দেশের বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এই সংকটের মধ্যে নতুন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে পারে। তবে দেখতে হবে সেটা নতুন কোনো সেবা দিতে চায় কি না। প্রচলিত সেবা দিতে চাইলে নতুন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় কারা, তাদের অতীত কার্যক্রমও খতিয়ে দেখা উচিত। যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তাদের একীভূত করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে গ্রাহকেরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
এই সংকটের মধ্যে নতুন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে পারে। তবে দেখতে হবে সেটা নতুন কোনো সেবা দিতে চায় কি না। প্রচলিত সেবা দিতে নতুন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই।
সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকে কয়েক দফায় বিভিন্ন নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের জন্য চেষ্টা করেন দেশে ও প্রবাসে বসবাসকারী জ্বালানি ও প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক সেবা খাতের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ব্যবসায়ী। নগদ ফাইন্যান্সের পর্ষদে সাতজন পরিচালক রয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে রাহেল আহমেদের। তিনি চলতি মাসের শুরুতেও এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও ছিলেন।
নগদ ফাইন্যান্সের পর্ষদে প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মো. ফরিদ খান। তিনি সামিট গ্রুপের পরিচালক ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের হোয়াইটপাইন ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান। আরেকজন পরিচালক ফারহান করিম খানও সামিট পরিবারের সদস্য।
এ ছাড়া নগদ ফাইন্যান্সের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক সেবা (ফিনটেক) হোমপের প্রতিষ্ঠাতা ড্যান পার্কার ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা হাসিব হাসান তরফদার। তাঁরা দুজনই জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইকারী সেবা ‘পরিচয়’–এর ক্রিয়েটর (যাঁরা তৈরি করেছেন)। হোমপের সেবা ব্লেজের মাধ্যমে প্রবাসীদের অর্থ আনতে গত বছর সোনালী ব্যাংক চুক্তিও করে।
নগদ ফাইন্যান্সের পরিচালক হিসেবে আরও রয়েছেন তানভীর আহমেদ, যিনি এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ছাড়া নকিব চৌধুরী ও মো. আমিনুল হকের নামও রয়েছে পরিচালকের তালিকায়। তাঁরাও নগদের সঙ্গে যুক্ত বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। যদিও তানভীর আহমেদ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
রাহেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নগদ থেকে তিনি ছুটিতে আছেন। নগদ ফাইন্যান্সের এমডি হিসেবে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে।
নগদ ফাইন্যান্সের প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়ার পর আলোচনা ওঠে এটির এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কি না। কিন্তু নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ দাবি করেন, নগদ ফাইন্যান্সের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে আইন অনুযায়ী, নগদ ফাইন্যান্স চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে প্রচলিত নিয়মে এমএফএস সেবা চালু করতে পারবে।
এ বিষয়ে তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নগদ ফাইন্যান্সের সঙ্গে নগদের মালিকানার কোনো সম্পর্ক নেই। রাহেল আহমেদও এখন নগদে নেই। আমরা ক্ষুদ্র আমানত ও ঋণপণ্য চালু করতে চাই। নগদ ফাইন্যান্সের মাধ্যমে এটা চালুর পরিকল্পনা আছে।’
বর্তমানে দেশে বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের মতো এমএফএস প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ১৩টি। এসব সেবায় প্রায় ১৮ কোটি নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছে। একজন গ্রাহক চাইলে সব কটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানে হিসাব খুলতে পারেন। আর হিসাব খুলতে কোনো অর্থের প্রয়োজন হয় না। এ কারণে একজন গ্রাহকের একাধিক এমএফএস হিসাব রয়েছে। গত জুনে এসব সেবায় লেনদেন হয়েছে ৯৪ হাজার কোটি টাকা।
নগদ ফাইন্যান্স চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬। এর মধ্যে ২টি সরকারি। ১৯টির উদ্যোক্তা বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা ও ১৩টিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া একটি সরকারি ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন মেয়াদি আমানত নিতে পারে, যা কমপক্ষে তিন মাস মেয়াদি হতে হয়। ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ঋণ দিতে পারে। তবে কোনো চেক ইস্যু করতে পারে না।
(এই bunonnews.tv ওয়েভ-সাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বে-আইনি)
© 2025, বুনন নিউজ টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT