প্রতীকী ছবি
মহররম মাসে এমন একটি দিবস রয়েছে যাকে মানুষ বিভিন্নভাবে উদ্যাপন করে। সেটি হলো আশুরা দিবস। এদিন দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে যে কারণে এ দিবসের আমলে ভিন্নতা দেখা যায়। প্রথম ঘটনা: গোত্রসহ মুসা (আ.)-এর পরিত্রাণ ও সদলবলে ফেরাউনের পতন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখলেন স্থানীয় ইহুদিরা আশুরা দিবসে রোজা পালন করছে। ফলে তাদেরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো। তারা উত্তর দিল এ এমন এক দিবস যাতে আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.)-কে বিজয়ী করেছিলেন এবং বনি ইসরায়েলকে ফেরাউনের ওপর আধিপত্য দান করেছেন। এ দিনে সম্মানার্থে আমরা সিয়াম পালন করি। এতদশ্রবণে নবী (সা.) এরশাদ করলেন, ‘তাহলে তো এ দিন রোজা রাখার ব্যাপারে আমরাই অধিক হকদার। অতপর নবী (সা.) এ দিবসে রোজা পালনের নির্দেশ দেন।’ (বুখারি: ৩৯৪৩)
দ্বিতীয় ঘটনা: নবী দৌহিত্র হোসাইন (রা.) শাহাদাত বরণ। ইরাকের কারবালা প্রান্তরে মর্মবিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছিল ৬১ হিজরির পবিত্র জুমাবারে। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: ১১/৫৬৯)
এটি ছিল উম্মতের ওপর নেমে আসা সবচেয়ে বড় বিপদগুলোর একটি। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘হোসাইনের (রা.) শাহাদতের ঘটনাটি মহা বিপদগুলোর একটি। কারণ হোসাইন (রা.) এবং তার আগে উসমান (রা.)-এর শহিদ হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়েই পরবর্তীতে উম্মতের ওপর নেমে এসেছে অনেক মহা দুর্যোগ। আর তাদের শহিদ করেছে আল্লাহর নিকৃষ্ট বান্দারা।’ (মাজমু ফাতাওয়া: ৩/৪১১)
আশুরার ব্যাপারে দুটি শ্রেণি বিভ্রান্তিতে রয়েছে:
প্রথম দল: নাসেবিয়া, এরা আশুরা দিবসে আনন্দ-উৎসব পালন করে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের কিছু লোকও আছে, যারা এ ব্যাপারে ভুলের শিকার। তারা এ দিনে গোসল করা, মেহেদি ও সুরমা লাগানো ইত্যাদি আনন্দ প্রকাশজনক কাজ করে। এমন করার উদ্দেশ্য, যারা এ দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে পালন করে তাদের বিরুদ্ধাচারণ করা। কিন্তু এটাতো ভ্রান্তির বদলে ভ্রান্তির চর্চা এবং বিদআতকে প্রতিরোধ করা বিদআতের মাধ্যমে। যেমনটি বলেছেন ইবনু তাইমিয়া (রহ.)। (মাজমু‘ ফাতাওয়া: ৪/৫১৩)
দ্বিতীয় দল: শিয়াদের কয়েকটি দল এ দিনকে শোক দিবস হিসেবে পালন করে। এদিন তারা গণ্ডাদেশ জখম করে, বুকের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলি সব কথাবার্তা বলে। এরা এমন অবস্থায়ও উপনীত হয় যে, নিজে নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করে। কেউ কেউ তরবারি দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্ত বইয়ে দেয়। তাদের দাবি, এভাবে তারা হোসাইন (রা.)-কে হারানোর বেদনা প্রকাশ করে। এরা নিজেদের তার একান্ত ভক্ত ও অনুসারী বলেও দাবি করে। মিডিয়াগুলোও এমনভাবে প্রচার করে যেন তারাই একমাত্র আহলে বাইত বা রাসুল-পরিবারের ভক্ত। যারা তাদের মতো কাজ করে না তারা আহলে বাইতের ভক্ত নয়। এটা একদম নির্জলা মিথ্যাচার।
কারণ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতই তো আহলে বাইতকে সর্বাধিক ভালোবাসে। কিন্তু তারা ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে শরিয়ত লঙ্ঘন করে না। নিজেরা নিজেদের আহত ও বিক্ষত করার আসল কারণ- রাফেজিরা যা প্রকাশ করে না তা হলো, তারাই তো হোসাইনকে (রা.) অসম্মান করেছিল যখন তিনি কুফার ভূমিতে তাদের কাছে এসেছিলেন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: ১১/৫৩০-৫৩২)
শুধু তাই নয় তারা এর আগে হোসাইন (রা.)-এর চাচাতো ভাই মুসলিম ইবন আকিলকেও অপমান করেছিল। এমনকি ইবন জিয়াদ তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। (প্রাগুক্ত: ১১/৪৮৪-৪৮৮)
সুতরাং তাদের সঙ্গে অসম্মান ও বেয়াদবিপূর্ণ আচরণ করার অনুশোচনাতেই তারা মূলত এসব অসংলগ্ন আচরণ করে থাকে।
হোসাইন (রা.) শাহাদাত সম্পর্কে সঠিক অবস্থান:
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনাকে উম্মতের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বড় বিপদগুলোর একটি গণ্য করে। এজন্য মুসলিমরা হূদয়ে গভীর শোক ও অশেষ বেদনা অনুভব করে। কিন্তু তারা শুধু এমন কাজই করেন শরিয়ত যা শিক্ষা দিয়েছে। আর শরিয়তে শোকের সময় ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রজিউন’ পড়তে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, (‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রজিউন’) নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭)
রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি কোনো মুসলিম বিপদে আক্রান্ত হয়। তারপর পরবর্তীতে সে বিপদ স্মরণ হলে সে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রজিউন’ পড়ে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য সে পরিমাণ পুণ্য লিখেন যে পরিমাণ লেখা হয়েছে বিপদে আক্রান্ত হবার দিন।’ (ইবনে মাজাহ: ১৫৯৮)
সুতরাং এ দিনে বেশি বেশি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রজিউন’ পড়তে হবে।
(এই bunonnews.tv ওয়েভ-সাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বে-আইনি)
© 2025, বুনন নিউজ টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT