ফাইল ছবি
চরের মাটি উর্বর। মানুষও পরিশ্রমী। তাঁরা পরিশ্রমের মাধ্যমে বালুময় চরকে সবুজে রূপান্তর করেছেন। কৃষি ও প্রাণিসম্পদে তাঁদের অবদান এখন স্বীকৃত। কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকারে তাঁরা পিছিয়ে রয়েছেন। তাই চরের মানুষের এসব অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা পৌঁছে দিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে চরের সংকট, সম্ভাবনা ও সক্ষমতাকে দেখতে হবে।
‘উত্তরবঙ্গের চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব বিষয় উঠে এসেছে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ ও প্রথম আলো। এতে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, কাউকে পেছনে রেখে উন্নয়ন করা যাবে না—এটিই সরকারের টেকসই উন্নয়ন কৌশল। তাই প্রচলিত সরকারি সুবিধাগুলো চরের মানুষ পান কি না, তা তদারক করতে হবে।
চরগুলো গবাদিপশু লালন-পালনের উর্বর ক্ষেত্র উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চরে প্রাণিসম্পদ বিভাগের সেবা বাড়াতে হবে। প্রতিবছর বাজেটে চরের জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় হয় না। তাই কোনো সমন্বয়ের অভাব আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। একই সঙ্গে চরের মানুষ যাতে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাবিষয়ক পরামর্শ পান, সে জন্য সেখানে ডিজিটাল সেবার মান বাড়াতে হবে।
চরের মানুষের মধ্যে বিপুল সম্ভাবনা আছে বলে উল্লেখ করেন ফ্রেন্ডশিপের নির্বাহী পরিচালক রুনা খান। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, গ্রামের সঙ্গে চরের পার্থক্য রয়েছে। চরগুলো মূল ভূখণ্ড থেকে বেশ দূরে। তাই তাঁদের মৌলিক অধিকার ও চাহিদার সুযোগ করে দিতে হবে। এগুলো নিশ্চিত করা গেলে তাঁরাই তাঁদের মতো জীবন সাজিয়ে নিতে পারবেন। তিনি বলেন, চরের ছেলেমেয়েরা এখন শুধু নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নয়, বড় প্রতিষ্ঠানেও চাকরি করছেন। তাঁরা অক্সফোর্ডেও পড়তে যাচ্ছেন। তাঁদের অবহেলা করার সুযোগ নেই।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট চরের মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা, পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশনসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কীভাবে তাঁদের এসব চাহিদার জোগান দিতে পারব।’
শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও ভাবতে হবে জানিয়ে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের এদেশীয় পরিচালক অনো ভ্যান ম্যানেন বলেন, চরের শিশুদের জন্য কাজ করার সময় এসেছে। কারণ, শিশুরা সব সময় তাঁদের অধিকার ও সুবিধাপ্রাপ্তির দাবি রাখে।
অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হলেও জাতীয় দারিদ্র্য হারের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার পার্থক্য রয়েছে। বন্যা ও নদীভাঙন চরের একটি বড় সমস্যা। এ কারণে চরের মানুষের দারিদ্র্য মূল ভূখণ্ডের মানুষের চেয়ে বেশি। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, যৌতুক ও বাল্যবিবাহ বেশি। সেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার ও এনজিওগুলোকে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে কাজ করতে হবে।
ফ্রেন্ডশিপের চরের প্রতিনিধি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার নূরী চৌধুরী চরের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশনসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বন্যায় কলাগাছের ভেলায় চড়ে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারলেও গরু–ছাগল নিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয় না। এ সময় বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুরা বেশি বিপদে পড়ে। আশ্রয়কেন্দ্রে কিশোরীদের নিরাপত্তা থাকে না। খরা এবং অত্যধিক তাপমাত্রাও এখন চরের বড় দুর্যোগ।
(এই bunonnews.tv ওয়েভ-সাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বে-আইনি)
© 2025, বুনন নিউজ টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT