প্রতীকী ছবি
ভবিষ্যতের নেতা তৈরিতে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা উপেক্ষা করা যায় না বলে মনে করেন অনেকে। একসময় ছাত্র রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো অনেকে এখন দেশের প্রধান দলগুলোর নেতৃত্বে। অথচ, সেই ছাত্র সংগঠনগুলোর পদে পদে এখন অস্থিরতা। ভেঙে যাচ্ছে সংগঠন, ফাটল ধরছে নেতৃত্বে। কেউ বলছেন, আচমকা রাজনীতি করতে আসা ব্যবসায়ীদের টাকার দাপটেও টিকতে পারছেন না অনেকে।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ভেঙেছে। তবে অস্থিরতা বেশি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোতেই। ইতোমধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট দুভাগ থেকে তিনভাগ হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্ব নিয়েও টানাপোড়েন চলছে। ছাত্রলীগের একটি অংশ দীর্ঘদিন পদ না পাওয়ায় হতাশ। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের সভাপতি জয়-লেখককে ব্যর্থ বলছেন তারা। বিভাজন স্পষ্ট ছাত্রদলেও। আবার ছাত্র অধিকার পরিষদের কয়েকজন নেতা কয়েক মাস আগে আরেকটি সংগঠনের নাম ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের সংগঠন কয়েক বছর পার না হতেই নেতৃত্বের বিরোধের জেরে ভেঙে যায়।
নেতা-কর্মীর সংখ্যা কম হলেও দেশের অনেক ইসুতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোকে বেশি সোচ্চার থাকতে দেখা যেত। কিন্তু দলগুলোতে নেতৃত্ব নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব কাটছেই না। গত ১৬ জানুয়ারি ‘ভাঙা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট আবারও ভাঙে।’
২২ নভেম্বর ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম সম্মেলনে নেতৃত্ব পায় ফয়েজ উল্লাহ ও দীপক শীল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট এবং ঢাকা মহানগরের সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ইউনিটের নেতারা বর্তমান কমিটির বিরোধিতা করে আবারও সম্মেলন দাবি করে।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংগঠনের কিছু ধারা না মেনে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে সম্মেলন হয়। আমরা গত জাতীয় নির্বাচন এবং ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু আমাদের সংগঠনে যদি গণতন্ত্র না থাকে, সংগঠন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা চাই, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পুনরায় সম্মেলন হোক।’
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত, এ বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করবো না। বিষয়টি সমাধানের দিকে যাচ্ছে।’
গুরুত্ব পাচ্ছে ব্যবসায়ীরা
ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভাজন এবং অনৈক্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এর বড় কারণ সময়ের অস্থিরতা, যা ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রভাব ফেলছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারও ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভাজনকে উৎসাহিত করে। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর এক বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যবসায়ীরা। জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচনেও রাজনীতিবিদদের চেয়ে বিত্তশালীরা মনোনয়ন পাচ্ছে বেশি।’
দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা কিংবা শিক্ষার্থীবান্ধব আন্দোলন না থাকাও ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভাজনের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনও মন্তব্যকে ঘিরেও দেখা দিচ্ছে রাগ-ক্ষোভ। এমন অস্থিরতাও তাদের বিভাজনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ছাত্র সংগঠনগুলো ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দেবে, এটা সহজে বলা যায় না।’
(এই bunonnews.tv ওয়েভ-সাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বে-আইনি)
© 2025, বুনন নিউজ টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT