নিজের খামারে কেঁচো সার তৈরিতে ব্যস্ত রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বড়দরগা ফকিড়া গ্রামের ফজলু মণ্ডল
ফজলু মণ্ডলেরা দুই ভাই। তাঁদের বাবা নবিজ উল্লাহ মণ্ডল ছিলেন এলাকার বড় কৃষক। ২৩ একর জমির মালিক ছিলেন তিনি। চাষাবাদই ছিল নবিজ উল্লাহর একমাত্র পেশা। তাই বড় হয়ে অন্য পেশায় আগ্রহ দেখাননি তাঁর ছেলে ফজলু।
ফজলুও বাবার মতো আদর্শ কৃষক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জমিতে শুরু করেন চাষাবাদ। কিন্তু শুধু রাসায়নিক সার দিয়ে জমিতে ভালো ফসল ফলত না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন ফজলু।
একদিন ফজলুর কথা শুনে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কেঁচো সার তৈরির করে জমিতে দেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর ফজলু কৃষি বিভাগের সহায়তায় শিখে নেন কেঁচো সার তৈরির পদ্ধতি। সেই কেঁচো সার আজ নিজের জমিতে ব্যবহারের পর বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে তাঁর। এখন মাসে তিনি প্রায় ৭০ হাজার টাকা আয় করছেন। তাঁকে দেখে গ্রামের আরও কৃষক-কৃষাণী কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। ফজলুও এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন ‘কেঁচো ফজলু’ হিসেবে।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বড়দরগা ফকিড়া গ্রামের ফজলু মণ্ডলের বাড়ি। গ্রামে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে প্রত্যেক কৃষকের বাড়ির খুলিয়ানে অথবা রাস্তার ধারে তৈরি করা হচ্ছে কেঁচো কম্পোস্ট সার। রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য সার তৈরির ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে টিনের চালা। সেই চালার নিচে তৈরি হচ্ছে কেঁচো কম্পোস্ট সার। গ্রামের লোকজনকে ফজলুর কথা জিজ্ঞাসা করতেই বলে ওঠেন, ‘ফজলু, কোন ফজলু, কেঁচো ফজলু?’
ফজলুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে কেঁচো সার তৈরির রিং বসানো। সেগুলো পরিচর্যা করছেন কয়েক শ্রমিক। ফজলুর খোঁজ করতেই তাঁরা দেখিয়ে দেন বাড়ির পাশের সবজিখেত। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কেঁচো কম্পোস্ট ব্যবহার করে ভালো বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন তিনি। প্রতিবেদককে দেখে আলে এসে শোনান কেঁচো সার তৈরির গল্প।
ফজলু মণ্ডল বলেন, ২০১৬ সালের কথা। হঠাৎ তাঁর এক একর জমির আমন খেত লালচে রং ধারণ করে। খেত দেখে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হোসেন আলী গাজী তাঁকে জানান, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় এ রকম হয়েছে। এভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে এক সময় জমিতে ফসল ফলবে না। বিষয়টি তাঁকে ভাবিয়ে তোলে। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে কী দিলে জমিতে ভালো ফসল ফলবে, এ বিষয়ে ওই কৃষি কর্মকর্তার কাছে তিনি পরামর্শ চান। তাঁর আগ্রহ দেখে কৃষি কর্মকর্তা তাঁকে ওই বছরের ডিসেম্বরে এনএটিপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে কেঁচো সার তৈরির কৌশল শেখান। বাড়িতে ফিরে তিনি উঠানে চালা তুলে সেখানে চারটি স্যানিটারি রিং বসান। নিজের খামারের তাজা গোবর সংগ্রহ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে পাওয়া কেঁচোগুলো রিংয়ের মধ্যে ছেড়ে দেন।
(এই bunonnews.tv ওয়েভ-সাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বে-আইনি)
© 2025, বুনন নিউজ টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT