• ঢাকা
  • |
  • শনিবার, ৩রা মে ২০২৫
  • - ৩৩° সে:
Language

বাংলাদেশ

মাছ কেটে আর সংসার চালাতে পারছেন না হারুন

বুনন নিউজ

বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই আগস্ট ২০২২

মাছবাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় মাছকাটার শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বন্দরবাজার এলাকার লালবাজার মাছের আড়তে

মাছবাজারের পাশে একটি কক্ষ। সেখানে চারটি খাট (বসার আসন) পেতে রাখা হয়েছে। সব কটি খাটের সামনে মাছ কাটার বঁটি ও প্লেট রাখা আছে। এর মধ্যে দুজন পাশাপাশি খাটে বসে আছেন। একজন মাছ কাটছেন আর অন্যজন দেয়ালের সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। মাঝের দুটি খাট খালি পড়ে রয়েছে। সিলেটের বন্দরবাজার এলাকার লালবাজার মাছের আড়তে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের চিত্র এটি। যদিও বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে মাছবাজারে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে। তবে কয়েক দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আরেক দফা বাড়ায় মাছবাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম দেখা যাচ্ছে।

বাজারের পাশের ওই কক্ষে পাঁচজন মিলে ভাগ করে মাছ কাটেন। মাছ কাটার কক্ষটি পাঁচজন মিলে ভাড়া নিয়েছেন। বাজারে যাঁরা মাছ কিনতে আসেন, তাঁদের অনেকেই এখানে মাছ কাটান। তবে কয় দিন ধরে বাজারে মাছের ক্রেতা কমেছে। এ ছাড়া একসঙ্গে একাধিক মাছ কিনতেন—এমন ক্রেতার সংখ্যাও কমে গেছে। পাশাপাশি মাছ কাটার দামও বাড়িয়েছেন তাঁরা। এতেও গ্রাহক কিছুটা কমেছে বলে ধারণা করছেন মাছ কাটতে থাকা হারুন মিয়া।

হারুন মিয়া বলেন, ‘ভাই, ওখন আর মাছ খাটিয়া সংসার ছালাইতাম ফাররাম না (মাছ কেটে সংসার চালাতে চালাতে পারছি না)। সবটার দাম বাড়তি। আগে দিনো মাছ খাটিয়া ৬০০ তনে ৭০০ ট্যাখা রুজি খরতাম (দিনে ৬০০-৭০০ টাকা রোজগার)। ওখন ৪০০ ট্যাখা রুজ ফালাইতে খষ্ট ওর। এই ট্যাখা দিয়া ঘরভাড়া দিতাম, দোখানভাড়া দিতাম, সংসারে দিতাম, লগে নিজের পখেট খরচ আবার বাইচ্চাইনতোর পড়ানির ট্যাখা দিতাম।’

হারুন মিয়ার সঙ্গে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকা টিপু মিয়া যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘বাজারো মানুষ নাই। বইয়া থাকতে থাকতে কোমড়ে ধরিলাইছে (কোমড়ে ব্যথা ধরেছে)। আত-ফা ছিদা করাত (হাত-পা সোজা করাতে হাঁটাহাঁটি করতে গেছে) ওখন বাইরে যাইতাম।’

মাছকাটার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাঁরা প্রতিটি মাছ কাটায় ৫ টাকা করে বৃদ্ধি করেছেন। বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ায় তাঁরাও বাধ্য হয়ে মাছ কাটার মূল্য বৃদ্ধি করেছেন। তবে এখন অনেকেই আগের মতো ব্যাগ ভরে বাজার করেন না। এতে মাছকাটার শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। সব মিলিয়ে মাছ কেটে সংসার টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান তাঁরা।

হারুন মিয়াকে মাছ কাটতে দিয়ে পাশে বসে ছিলেন নগরের বারুতখানা এলাকার বাসিন্দা দিলদার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মতো মাছেরও দাম বেড়েছে। আগে একসঙ্গে কয়েক পদের মাছ কিনতাম। তবে এখন বাজারের অস্থিরতা না কাটা পর্যন্ত কিছুটা বাড়তি খরচ কমানোর চেষ্টা করছি। তাই এখন হিসাব করে মাছ কিনি। এতে মাস শেষে কিছুটা হলেও টাকা বাঁচবে।’

দিলদার হোসেনের কথার সূত্র ধরে হারুন মিয়া বলেন, ‘মাছ কেটেই আমাদের সংসার চলে। এখন মাছের ক্রেতা কম আসলে কিংবা কম বেচাকেনা হলে আমাদের ওপরও এর প্রভাব পড়বে। এমন অবস্থায় টিকে থাকতে হচ্ছে। কম আয়ে সংসার চালানোর চেষ্টা করছি।’

সর্বশেষ সংবাদ