Picture : Collected
আদর্শ শিক্ষক হওয়া সাধনার বিষয়: উপাচার্য ড. মশিউর রহমান - বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আলোচনা সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য
বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের অডিটোরিয়ামে প্রফেশনাল কলেজের ব্যবস্থাপনা, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও পরীক্ষা শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির এই সময়ে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। শিক্ষার্থীদের বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে হলে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিক্ষকদের সমৃদ্ধ হতে হবে। একারণেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তৈরি হওয়ার জায়গায় শিক্ষকের বেতনভাতা যতটুকু বাড়বে, তার তুলনায় গবেষণায়, দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ, প্রতিজন শিক্ষকের প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ল্যাপটপ থেকে শুরু করে আধুনিক ক্লাসরুম, বিজ্ঞান ল্যাবসহ সবকিছু নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলি। কিন্তু আর কিছু না হোক- প্রতিজন শিক্ষকের হাতে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। একজন শিক্ষক পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে তখনই গড়ে উঠবে, যখন জ্ঞানের এই সকল উপকরণ তার হতের মুঠোয় থাকবে।’ আজ বুধবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের সেমিনার কক্ষে বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২২ উপলক্ষে স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন আয়োজিত ‘শিক্ষকের মর্যাদা: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য। আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার বিকল্প নেই উল্লেখ করে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘শিক্ষকদের সম্মানের জায়গায় বঙ্গবন্ধু কন্যা আপোষহীন।
আমরা দেখেছি বঙ্গবন্ধু কন্যা তাঁর শিক্ষকদের কতোটা সম্মান করেন। তিনি মন্ত্রিসভা এবং দলীয় নেতাদের ঊর্ধ্বে রাখতেন শিক্ষকদের। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কথা আমরা সবাই জানি। তাঁকে কতটা সম্মান করতেন প্রধানমন্ত্রী। এই বিবেচনায় সমাজের শীর্ষে রয়েছেন শিক্ষক। আমাদেরও আত্মসমালোচনা করা প্রয়োজন। আমরা ক’জন আনিসুজ্জামান হতে পেরেছি। মনে রাখতে হবে আমাদের প্রধান জায়গা ক্লাসরুম, বিজ্ঞান ল্যাব। শিক্ষকের হাত ধরে যখন মৌলবাদী তৈরি হয়, তখন রাষ্ট্র বিপন্ন হওয়ার উপকরণ তৈরি হয়। আমাদেরকে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে হবে। একইসঙ্গে মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে জঙ্গিবাদ তৈরির সঙ্গে যখন কেউ সংশ্লিষ্ট হন সেটিকেও নির্মূল করতে হবে। সেটির আত্মবিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। সেকারণেই শিক্ষক একইসঙ্গে নেতা, সংগ্রামী এবং একজন জ্ঞানতাপস মানুষ।’ দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘আগামীর সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষক জ্ঞানতাপস মানুষ হয়ে উঠুক। আমদের কাছ থেকে জাতির পাওয়ার অনেক কিছু আছে।
আমরা যখন ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় যুক্ত হই, ক্লাসরুমে পড়িয়ে পড়িয়ে একেকটি উর্বর মস্তিষ্ককে আরও উর্বরতর করি, শিক্ষার্থীদের বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলি- তখন আমরা মনে করি এই অপার দেয়ার মধ্যে যে আনন্দ, পাওয়ার মধ্যে তার চেয়ে আনন্দ কম। উদার জায়গা থেকে আমরা যখন একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে তুলি, মনে করি আমাদের প্রাপ্তির সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গা তাই, যখন বিনম্রভাবে আমাদের শিক্ষার্থীরা সারাটা জীবনজুড়ে শিক্ষকদের মনে রাখে, গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে। আমাদের বৈষয়িক প্রাপ্তি সবসময় কম ছিল। কিন্তু সবসময়ে আমাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকুক এটিই নিশ্চিত করতে চাই।’ শিক্ষার্থীদের হাতেও আধুনিক সময়ের চাহিদার আলোকে সব ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস দেয়ার কথা উল্লেখ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরবে দাঁড়িয়ে যখন বলেন- বঙ্গবন্ধু আমার পিতা, আমি যা কিছু করছি তিনি তা ওপারে বসে দেখছেন। আর কিছু না হোক, পিতার সঙ্গে কন্যার যে হৃদ্যতা, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর ভাবনাকেই ধারণ করেন। সেকারণেই শিক্ষকের জন্য যা যা করণীয় আমি বিশ্বাস করি যথাযথভাবে তুলে ধরা হলে ক্রমান্বয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা তা পূরণ করবেন।
আসুন মুক্তবুদ্ধির পতাকাতলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের ক্লাসরুমগুলোকে বিজ্ঞান ভাবনায়, উৎকর্ষতায় সাজিয়ে তুলি।’ স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর, আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু প্রমুখ।
(এই bunonnews.tv ওয়েভ-সাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বে-আইনি)
© 2025, বুনন নিউজ টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT