বিদ্যালয়ে যেতে শিশুদের নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়। সম্প্রতি বরিশালের হিজলা উপজেলার দক্ষিণ চরমেমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বর্ষা মৌসুমে পুরো মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হয়, খেলাধুলা করতে পারে না।
ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র কাম বিদ্যালয়ের ভবনে যাতায়াতের জন্য কোনো সড়ক নেই। বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের সামনের মাঠ ডুবে থাকে হাঁটুপানিতে। উঁচু জোয়ারে পানি ঢুকে সৃষ্টি হয় স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে।
এ চিত্র বরিশালের হিজলা উপজেলার দক্ষিণ চরমেমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। দোতলা ভবন থাকলেও যাতায়াতের রাস্তা নেই। বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অর্ধেকে নামে। পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে খুদে শিক্ষার্থীরা।
দক্ষিণ চরমেমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৭ সালে। ওই সময় এটি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি এই বিদ্যালয়ে দোতলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনটি নিচু জমিতে নির্মিত। যাতায়াতের জন্য কোনো সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। ওই ভবনের সামনের নিচু জমিতে বর্ষা মৌসুমে হাঁটুপানি জমে থাকে। ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যাতায়াতের জন্য বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি সাঁকো নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক ও অভিভাবকেরা জানান, বর্ষা মৌসুমে পুরো মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে যেমন সমস্যায় পড়তে হয়, খেলাধুলা করতে পারে না। শ্রেণিকক্ষেই বন্দী থাকতে হয়। বছরের তিন থেকে চার মাস এভাবেই চলে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার আগে আমাদের এখানে প্রায় সাড়ে ৩০০ শিক্ষার্থী ছিল। করোনার পর তা অর্ধেকে নেমে আসে। আর বর্ষা মৌসুম ও জোয়ারের দুর্ভোগের কারণে শিক্ষার্থী আরও কমেছে। এখন প্রতিদিন ৮০-৯০ জনের বেশি উপস্থিত হয় না।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেশমা ও সায়মা বলে, সাঁকোর ওপর দিয়ে স্কুলে যেতে ভয় লাগে। অনেকে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে আসে না। তাদের পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিদ্যালয়টির অভিভাবক সদস্য মোকসেদ মিয়া বলেন, বিলের মধ্যে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য যে পথ (মাটির রাস্তা) আছে, সেটি স্থানীয় দুটি বাড়ির দুই পুকুরের মাঝখান দিয়ে গেছে। দুটি বড় পুকুর থাকায় মাটির সড়ক নির্মাণ করে লাভ হচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই মাটির সরু সড়ক ধসে পুকুরে বিলীন হয়ে যায়। এ জন্য প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য কাঠ-বাঁশ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করতে হচ্ছে। সাঁকোটি নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুশিক্ষার্থীরা ওই সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে ভয় পায়। এ জন্য বর্ষার সময় অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে না।
ওই বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য বাঁশ ও সুপারিগাছ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে দিয়েছেন মেমানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য স্থায়ী রাস্তা নির্মাণ করতে অন্তত ১০-১২ লাখ টাকা প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদের ব্যয় করার মতো ওই পরিমাণ তহবিল নেই। বরাদ্দ পেলে সড়ক নির্মাণ ও মাঠ ভরাট করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
হিজলার ইউএনও বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে যাতায়াতে দুরবস্থার বিষয়টি জানি। সেখানে সড়ক নির্মাণ করা খুব জরুরি। একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সড়ক নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি।’
(এই bunonnews.tv ওয়েভ-সাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বে-আইনি)
© 2025, বুনন নিউজ টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT