প্রতীকী ছবি
গত এক বছরে বেসরকারি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। আগের দুই বছরে গড়ে বেড়েছিল ৯০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।
ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে অর্থনীতি যে চাপে পড়েছে, তার প্রভাব পড়েছে বেসরকারি খাতের ঋণেও। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তাদের ব্যাংকঋণ বেড়ে গেছে, আবার ভোক্তাঋণও বেশ বেড়েছে।
সব মিলিয়ে গত জুলাই শেষে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা।
যদিও ঘোষিত মুদ্রানীতিতে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি ধরা রয়েছে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। ফলে মুদ্রানীতির ঋণ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য, সেটি এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। এত মূল্যস্ফীতির পরও গ্রাহকেরা বেশি ঋণ নিচ্ছেন। কারণ, ঋণের সুদহার এখনো ৯ শতাংশের মধ্যে।
‘বিলম্বিত ঋণপত্রের (ডেফার্ড এলসি) ঋণ এখন সমন্বয় হচ্ছে। আবার ডলারের দামও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ভোক্তাঋণও বাড়ছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।’
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই থেকে গত জুলাই পর্যন্ত বেসরকারি খাতে সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ সময়ে ঋণ বিতরণ হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। আগের দুই বছরে গড়ে ৯০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। এই ঋণ হিসাব সুদসহ।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর থেকে এমনিতেই ঋণের চাপ বেড়েছে। কারণ, ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের মধ্যে। এ জন্য অনেকেই নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ উৎপাদনক্ষমতা বাড়াচ্ছেন। গত চার মাসে ডলারের দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ফলে আমদানিকারকদের ঋণপত্রের মূল্য বেড়ে গেছে। এতে ঋণও বাড়ছে। আবার চলতি বছর আবাসন, গাড়ি ও ব্যক্তিগত ঋণও বেশ বেড়েছে।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিলম্বিত ঋণপত্রের (ডেফার্ড এলসি) ঋণ এখন সমন্বয় হচ্ছে। আবার ডলারের দামও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ভোক্তাঋণও বাড়ছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।’
জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণ ছিল ১০ লাখ ২ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের জুলাইয়ে বেড়ে হয় ১০ লাখ ৯৫ হাজার ২০১ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ঋণ বেড়ে হয় ১১ লাখ ৮৭ হাজার ১০ কোটি টাকা। আর গত জুলাইয়ে ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের জুলাই থেকে পরের এক বছরে ঋণ বাড়ে ৯২ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে পরের এক বছর ঋণ বাড়ে ৯১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। আর গত এক বছরে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে কম সুদে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়, যা এখনো বহাল আছে। এর ফলেও ঋণে বড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আবার বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ করছেন।
ঢাকা ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার বড় ধাক্কার পর মানুষ ফ্ল্যাট কেনায় মনোযোগ দিয়েছে। বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ কম থাকায় গাড়ি ও বাড়ি কেনার ঋণের চাহিদা বেড়ে গেছে।’
এদিকে আবাসন খাতে খরচ বেড়ে গেছে ২৫-৩০ শতাংশ। পাশাপাশি গাড়ির দামও বেড়ে গেছে। এরপরও কম সুদের কারণে এসব ঋণে ছুটছেন গ্রাহকেরা। এর ফলে ভোক্তাঋণ আরও বেশি বাড়ছে।
সিটি ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান অরূপ হায়দার বলেন, গত বছরে তুলনায় ভোক্তাঋণে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে গাড়িঋণে ৫০ শতাংশ ও আবাসন ঋণে দ্বিগুণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঋণ আদায়ে কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছে না।
ভোক্তাঋণের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডের ঋণও এখন বেশি যাচ্ছে। গত মে মাসে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। আর জুনে যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।
ব্র্যাক ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান মাহীয়ুল ইসলাম বলেন, ‘গত জুন পর্যন্ত আমাদের ভোক্তাঋণে ১৫-২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে তেলের দাম বাড়ায় এখন গাড়ির ঋণের চাহিদা কমে গেছে। আবার ফ্ল্যাটের দামও বেশ বেড়েছে।’
(এই bunonnews.tv ওয়েভ-সাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বে-আইনি)
© 2025, বুনন নিউজ টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT