• ঢাকা
  • |
  • শনিবার, ২৪শে মে ২০২৫
  • - ৩৩° সে:
Language

অর্থনীতি

ওক্যাবের অনুষ্ঠানে সালমান রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল নেবে না সরকার

বুনন নিউজ

মঙ্গলবার, ৩০শে আগস্ট ২০২২

সালমান এফ রহমান

‘বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের কোনো চিন্তা করছে না সরকার। আবার রাশিয়া থেকে ক্রুড (অপরিশোধিত) তেল আমদানি করেও জ্বালানিসংকটের সমাধান হবে না। কারণ, রাশিয়া থেকে আনা ক্রুড তেল ব্যবহার উপযোগী করার সক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের যে পরিশোধনব্যবস্থা, সেখানে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করা সম্ভব।

রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের যে ধরন, সেটি আমাদের এখানে পরিশোধন সম্ভব নয়। তাই রাশিয়া থেকে ক্রুড তেল আমদানির সুযোগ পেলেও তা ব্যবহার করার সুযোগ নেই।’ গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ কথোপকথনের আয়োজন করে বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিনিধিদের সংগঠন ওভারসিজ করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ওক্যাব)। এ আয়োজনের শিরোনাম ছিল ‘মিট দ্য ওক্যাব’।

এতে জ্বালানিসংকট থেকে শুরু করে দেশের লোডশেডিং পরিস্থিতি, বিনিয়োগ, বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংকঋণে সুদের হারসহ নানা প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন সালমান এফ রহমান।

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে গ্যাস। স্পটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত বেশি দামে গ্যাস কিনে আমাদের এখন পোষাচ্ছে না। জ্বালানি নিয়ে আমরা সব জায়গাতেই চেষ্টা করছি। যাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি আছে, তারা যেন স্পট দামের কমে আবারও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আমাদের জ্বালানি দেয়, সেই চেষ্টা করছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বৈশ্বিকভাবে জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এ কারণে দেশে বিদ্যুতের সমস্যাও বেড়েছে। এ অবস্থায় অর্থনীতিতে আগামী ছয় মাসের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জ্বালানিসংকট মোকাবিলা করা।’

অনুষ্ঠানে ওক্যাবের আহ্বায়ক কাদির কল্লোল, সদস্যসচিব নজরুল ইসলাম, সদস্য জুলহাস আলম, শফিকুল আলম, সিরাজুল ইসলাম কাদির, ফরিদ হোসেন, পারভিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘দেশের ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন গ্যাসনির্ভর। কিন্তু এলএনজি গ্যাসের স্পট দাম এত বেড়ে গেছে যে এই দামে গ্যাস কিনে পোষাচ্ছে না। আশা করছি, বিশ্ববাজারে দ্রুত দাম কমবে। আর যদি না কমে, তা হলে এটি আমাদের জন্য ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’ বর্তমান বিদ্যুৎ–সংকট মোকাবিলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, তা জানতে চান এক সাংবাদিক।

জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণনীতিতে আছি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে পরিবেশগত দিকটিও মাথায় রাখতে হবে। তাই এখনই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।’ তবে লোডশেডিং কমাতে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি। সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমরা গুরুত্বের ভিত্তিতে রেশনিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। শিল্প খাতে যাতে এর প্রভাব খুব বেশি না পড়ে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গ বিদেশি ঋণ ও বিকল্প মুদ্রার ব্যবহার

মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ চাপে পড়বে কি না জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘এমন কোনো আশঙ্কা নেই। অপ্রয়োজনীয় ভীতি তৈরির জন্য অনেকে ঋণের চাপের কথা বলেন। বাংলাদেশ অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। আমাদের বেশির ভাগ ঋণই কম সুদের। তাই আমাদের ঋণের চাপে পড়ার আশঙ্কা নেই।’

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিকল্প মুদ্রার ব্যবহার নিয়ে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, বিকল্প মুদ্রার ব্যবহার নিয়ে আলাদা কোনো চিন্তা করা হচ্ছে না। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে পর্যাপ্ত মজুত থাকা সাপেক্ষে ক্ষেত্রবিশেষে অন্য মুদ্রা ব্যবহার করা যেতে পারে।

সুদহার ও বিনিয়োগ

ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ানো হবে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘একটা সময় সুদের হারের সীমা তুলে দিতে হবে। তবে এখন মূল্যস্ফীতি কমাতে গিয়ে সুদের হার বাড়ালে শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সুদহার না বাড়িয়ে আমরা বিলাসী পণ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমদানি কমাচ্ছি।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে বিনিয়োগ কমেছে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে বিনিয়োগের যে গতি ছিল, সেটা একটু কমেছে।