• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫
  • - ৩৩° সে:
Language

ভ্রমণ

হিমালয়ে হিমবাহে - হিমালয়ের হাতছানি

বুনন নিউজ

সোমবার, ৮ই আগস্ট ২০২২

ফাইল ছবি

এভারেস্ট অঞ্চলে পর্বতশিখরের আসল সৌন্দর্য দেখতে পাই ট্রেক শুরু করার দুদিন পর থেকে। এভারেস্ট ভিউ হোটেলের বারান্দা থেকে আমরা আগেও অনেক সুন্দর দৃশ্য দেখেছি। অমা ধবলাম ভিউ লজ আর তার সামনের চত্বরটা তার চেয়েও বেশি স্মৃতিময়। এখানে দাঁড়িয়েই আমি এভারেস্টের প্রেমে পড়েছিলাম। পাহাড় এত সুন্দর! দুটি যুগল পর্বতশিখর এত সুন্দর, এত মোহনীয়! শুধু পাহাড়ের দিকেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ক্যামেরার দিকে মুখ ফেরাতে ভালো লাগে না।

নামচেবাজার থেকে অনেকটা চড়াই পেরিয়ে খুমজুং। সেখানে ট্রেকিংয়ের পথ দুই ভাগ হয়ে গেছে। ডান দিকে এভারেস্ট বেজ ক্যাম্প (ইবিসি)–এর পথ চলে গিয়েছে থিয়াংবোচ। আর বাঁ দিকে ওপরে উঠে গিয়েছে গোকিও যাওয়ার পথ। সে পথে কিছুদূর যেতেই পাইনের বন শেষ। ঝাউ ও অন্যান্য ঝোপঝাড়ের সঙ্গে মিশে রয়েছে অসংখ্য ফুলগাছ। তাদের শাখার শিখরে রডোডেনড্রন গুচ্ছ। বেশির ভাগই গোলাপি বা বেগুনি রঙের। নিচে দেখে এসেছি ফুল ঝরে গেছে। কিন্তু এই উঁচুতে মে মাসেও রডোডেনড্রন ফোটার বিরাম নেই।

গোকিওর পথে যাওয়ার আগে অমা ধবলাম ভিউ লজ ও রেস্তোরাঁর সামনের চত্বরটায় বসে খানিকক্ষণ দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। আজ মে মাসের ৯ তারিখের বিষাদিত মেঘলা সকাল। মনে পড়ে দুবছর আগে মার্চের মাঝামাঝি রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে ওখানটাতে বসে অমা ধবলাম দেখে কী রকম মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিলাম। তার আগের দিন নামচে থেকে প্রায় একই জায়গাতে এসে অমা ধবলাম ও এভারেস্ট দেখেছি। ঠিক এখানেই ২০২০ সালে হিমালয়ের প্রেমে পড়েছিলাম আমি।

এভারেস্ট বেসক্যাম্প দেখে আসার পর থেকেই বারবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করেছে রডোডেনড্রনের কাছে, পাইন বনে, পাথর ভরা পার্বত্য পথে। তুষার ঢাকা পর্বত শিখরের কাছাকাছি। ইবিসি পর্যন্ত ট্রেক করে ফিরে আসার কথা যত ছোট করে বললাম, বিষয়টা মোটেই অত সরল ছিল না। ২০২০ সালের মার্চে ইবিসি থেকে ফেরার সময় আমরা লুকলা পৌঁছানোর আগেই কোভিড মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সারা পৃথিবী থমকে দাঁড়িয়েছিল। আর আমরা পুরোদস্তুর ট্রেকারের সাজে ব্যাকপ্যাক পিঠে নিয়ে অরণ্য, প্রান্তর, নদী, পাথর, পাহাড় ও হিমবাহ পেরিয়ে অবিচল হেঁটে গিয়েছিলাম হিমালয়ে, এভারেস্টের দিকে।

ট্রেক চলাকালেই প্রথম লকডাউন শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হই। তারপর ফিরে আসি লুকলায়। হিমালয়ের কোলে হিমশীতল ছোট্ট লোকালয়ে আটকে থেকে ওই কটা দিন সারাক্ষণ অনুপ্রাসময় লুকলাতে লকডাউন শব্দ দুটি মনে পড়ত। তারপর কাঠমান্ডুতে ফিরে এলেও দেশে–বিদেশে সব এয়ারপোর্ট বন্ধ হয়ে যাওয়াতে কয়েক সপ্তাহ আমাদের সেখানে আটকে থাকতে হয়। কঠোর লকডাউনে আবদ্ধ থেকে আমরা মহামারির সূচনাপর্বের দুর্যোগ ও বিচ্ছিন্নতা মোকাবিলা করেছি। বিধিনিষেধের মধ্যেই কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফেরার আয়োজন করতে হয়েছে।