• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫
  • - ৩৩° সে:
Language

ফিচার

যে অপরাধে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করা হয় বাবা ও ছেলেকে

বুনন নিউজ

সোমবার, ৮ই আগস্ট ২০২২

ফাইল ছবি

এটি বিশ্বের অন্যতম একটি সেরা চিত্রকর্ম। পেইন্টিং এঁকেছিলেন জাপানি চিত্রশিল্পী ‘টোয়োকুনি ইচিওসাই’। চিত্রটিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষকে ফুটন্ত গরম পানির হাঁড়িতে সেদ্ধ করা হচ্ছে, অন্যদিকে তিনি একহাতে তার ছেলেকে শূন্যে ধরে রেখেছেন। নিজে মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়েও সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ১৬ শতকের দিকে জাপানে এটি হয়ে উঠেছিল আদর্শ বাবার প্রতিচ্ছবি।

জাপানে এখনো এই ছবিটিকে আদর্শ পিতার প্রতীক মনে করা হয়। তবে এটি কোনো সাধারণ ছবি ছিল না। কিংবা শিল্পীর কল্পনাও নয়। বাস্তবেই ঘটেছিল এমন ঘটনা। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ছিল ইশিকাওয়া গোয়েমন। তিনি ছিলেন পেশায় একজন ডাকাত। জাপানের ইতিহাসে তাকে রবিনহুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ধনীদের অতিরিক্ত অর্থ লুট করে গরিবদের মাঝে ভাগ করে দিতেন।

জাপানের ইগা প্রদেশের শক্তিশালী মিয়োশি বংশের একটি সামুরাই পরিবারে ১৬ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জন্ম হয় ইশিকাওয়ার। তখন জাপান ছিল ‘আশিকাগা শোগুনাতের’ শাসনাধীন। ইশিকাওয়ার বয়স যখন ১৫ বছর তখন তার বাবা ইশিকাওয়া আকাশি কে আশিকাগা শোগুনেটের লোকেরা হত্যা করে।

বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইশিকাওয়া গোয়েমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। আর তাই তিনি ইগা নিনজুতসুর প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য মোমোচি নামের এক মাস্টারের দারস্থ হন। নিনজুতসুর হচ্ছে মার্শাল আর্টের মতো এক ধরনের প্রতিরক্ষা বিদ্যা।

নিনজুতসু প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় ইশিকাওয়া তার মাস্টারের স্ত্রীর সঙ্গেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। মাস্টার মোমোচি সান্দায়ু যখন এই ব্যাপারে জানতে পারেন তখন ইশিকাওয়া সেখান থেকে পালিয়ে যান। তবে খালি হাতে পালিয়ে যাননি! সঙ্গে করে নিয়ে যান তার মাস্টারের সবচেয়ে মূল্যবান তলোয়ারটি।

ইশিকাওয়া পালিয়ে কিয়োটা শহরে চলে যান। আর সেখানেই তিনি তার চুরির পেশাগত জীবন শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি একটি নিজস্ব চোরের দল তৈরি করেন। যে চোরেদের জন্য পুরো শহরের মানুষ সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকতেন।

ইশিকাওয়া তার দল নিয়ে দিনের বেলা শিকার খুঁজতো আর রাতের বেলা ডাকাতি করতো। তারা ডাকাতি করতো ধনী শ্রেণির বাড়িতে, আর দিনের বেলা শিকার খুঁজতো ব্যবসায়ীর রূপ ধরে।

শহরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা না পড়তে তারা চুরির অর্থ ও জিনিসপত্র লুকিয়ে গরিবদের বাড়ির সামনে রেখে যেতো। ইশিকাওয়া গোয়েমন ও তার দলের কর্মকাণ্ডের জন্য তারা জাপানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দরিদ্র শ্রেণির মানুষরা তাদের দেখতো বীর হিসেবে। বলা যায় গরিবের রবিনহুডে পরিণত হয় ইশিকাওয়া ও তার দল।

বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে জাপানের সেনগোকু আমলের যুদ্ধবাজ সম্রাট টয়োটমি হিদেয়োশিয়া কে হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন তিনি। শুধু ব্যর্থই হননি, তিনি সম্রাটের পেয়াদাদের হাতে ধরা পরে যান। সম্রাট কে হামলার চেষ্টা করায় ততক্ষনাৎ তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ ছিল একদম আলাদা ও ভয়ানক। তাকে ফুটন্ত তরলে সেদ্ধ করে মৃত্যু আদেশ দেওয়া হয়।